Wednesday, March 20, 2013

ডালিম

ডালিমকে সংস্কৃত দাড়িম্ব ইংরেজিতে  pomegranate বলেLythraceae গোত্রের একটি পাতাঝরা চিরহরিৎ বৃক্ষ। এই গাছের আদি জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ মনে করেন ডালিমের ভারতবর্ষ, অনেকে মনে করেন ডালিমের আদি নিবাস ইরান।

এই গাছ ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয় এবং এর কাঠের রঙ ফিকে পীত, কাঠে অল্প কালো দাগ থাকে। এর শাখা প্রশাখাগুলো গোলাকার। পাতা সাধারণত ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা এবং উভয় দিক সরু এবং উপরিভাগ চকচকে মসৃণ। ফুল ভেদে ডালিমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে। 

ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভিতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপী ও সাদা হয়। সাধারণত মে মাসে ফুল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। তিন প্রকার স্বাদের ডালিম দেখা যায় যথা, মিষ্টি, টক মিষ্টি এবং অম্লরস। দেশ ভেদে ডালিমের আকৃতি ও স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়। ডালিমের সবচেয়ে ভালো প্রজাতির নাম— স্পেনিশ রুবি। এ ছাড়া অন্যান্য ভালো প্রজাতিগুলো হলো— ঢোল্‌কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, পেপার শেল, মাসকেড রেড, বেদানা ও কান্ধারী। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ। 

ডালিম গাছ চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে ফল দেওয়া শুরু করলেও, শুরুর দিকে ভালো ফলন হয় না। সাধারণত ৮-১০ বছর বয়সের গাছ থেকে ভালো ফলন শুরু হয়। একটি পূর্ণ বয়ষ্ক সুস্থ সবল ডালিম গাছে বৎসরে ১০০-১৫০টি ফল ধরে। তবে ভালো পরিচর্যা নিলে ২০০-২৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে। একটি ডালিম গাছ ত্রিশ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফলন দিতে সক্ষম।

ডালিমে ৭৮ ভাগ জলীয় অংশ, ১৪.৬ ভাগ শর্করা, ১.৬ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ৬৫ কিলোক্যালরি তাপশক্তি , ০.০৬ মিলিগ্রাম থায়ামিন,  ০.১ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লেভিন,  ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম লৌহ

আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি মতে— চিকিৎসায় রোগাগ্রস্থ বা রোগোত্তর কালে পথ্য হিসেবে ডালিমের রস খাওয়ানো হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য (সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি) থাকায়, বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়।

কবিরাজি মতে ডালিমের রস হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্যে এই ফলের রস বিশেষ উপকারী। এই গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। এছাড়া ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল স্ত্রীলোকের রক্তস্রাবনাশক।ডালিমের রস কুষ্ঠরোগের উপকারে আসে।

ডালিম অ্যান্টি অক্সিডেন্টের বিশাল ভাণ্ডার। এ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের দেহ কোষকে দারুণভাবে মুক্ত রাখে। ফলে আমরা অসময়ে বুড়িয়ে যাই না। রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ডালিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে ডালিমের অ্যান্টি অক্সিডেন্টে রংয়ের থিনারের মতো কাজ করে। বাজে খাদ্যাভ্যাস ও কোলেস্টেরলের কারণে রক্তনালীর দেয়াল শক্ত হয় ও তার ভেতরে ব্লকেজ দেখা দেয়। ডালিম কম ঘনত্বের লিপ প্রোটিন ও খারাপ কোলেস্টেরলের অক্সিডাইজিং প্রতিরোধ করে। ডালিম রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্তপ্রবাহ সাবলীল রাখে। আরথ্রাইটিস ও ইরকটাইল ডিসফাংশন প্রতিরোধে এটি সহায়ক। দুটি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে ‘প্রোস্টেট ক্যান্সার’ ও হৃদরোগের চিকিৎসায় ডালিমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে তাদের মৃত্যু ত্বরাণ্নিত করে। 

সুতরাং যদি সুস্থ থাকতে চান প্রতিদিন ডালিম খান।