Sunday, February 24, 2013

রসুন

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত হিপোক্রিটাস মানবদেহের ক্যান্সার, ঘা, কুষ্ঠ সারাতে; রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিপাকতন্ত্রের হজমজনিত সমস্যা দূর করতে রোগীদের রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। শুধু তা-ই নয়, আধুনিক ভেষজ চিকিৎসকরাও সর্দি, কাশি, জ্বর, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, কৃমি, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য পরিপাকের সমস্যাসহ লিভার ও পিত্তথলির নানা উপসর্গ দূর করতে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 


ছোট্ট এক কোয়া রসুন অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে। রসুনের সালফার শরীরের নানা হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। শুধু কাঁচা রসুনই নয়, রান্নায় ব্যবহৃত রসুনও শরীরের জন্য উপকারী। ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম, ক্লোরিন, সেলেমিনিয়াম সবই আছে রসুনে।

 

এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মাঝারি সাইজের রসুনে এক লাখ ইউনিট পেনিসিলিনের সমান অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট অ্যামিবিক ডিসেনট্রি নির্মূলের ক্ষেত্রে রসুন বেশ কার্যকর। আর তাই শরীরের রোগ সংক্রমণ দূর করার জন্য একসাথে তিন কোয়া রসুন দিনে তিন থেকে চারবার চিবিয়ে খান। রক্তের চাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য প্রতিদিন তিন থেকে দশ কোয়া রসুন খেতে পারেন। তা ছাড়া রসুনের জল সেবন করতে হলে ছয় কোয়া রসুন পিষে এক কাপ ঠাণ্ডা পানিতে ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে ছেঁকে রসুন পানি সেবন করুন। 

 

রসুন ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। রসুন প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় এই তথ্য ছাপা হয়েছে। রসুন সম্ভবত ক্যানসার কোষের বিস্তারের গতি শ্লথ করে দেয়। তবে রান্না করা রসুনে ক্যানসার প্রতিরোধক এই গুণ পুরোপুরি বজায় থাকবে কি না সে বিষয়ে এই গবেষণায় কিছু বলা হয়নি।

 

উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে রসুনের ভূমিকা অপরিসীম। এটি প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীরা একদল লোকের প্রত্যেককে দৈনিক চার আউন্স পরিমাণ মাখন খেতে দিয়েছিলেন। মাখন খাওয়ার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তার পর এ দলের অর্ধেককে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রসুন খাওয়ানো হলো। রসুন খাওয়ার পর মাখন গ্রহণকারীদের রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা হলো। ফলে দেখা গেল, রসুন সেবনকারীদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্যদের চেয়ে শতকরা সাত ভাগ কম। পাশাপাশি হৃদরোগ কমানোর জন্য রসুন রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আর তাই তো গবেষকদের অভিমত, রসুন রক্ত জমাট নিরোধী অ্যাসপিরিনের মতোই শক্তিশালী।

 

রসুন খেতে হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে হবে। কারণ চিবিয়ে না খেলে রসুনের রাসায়নিক উপাদান এলিসিন নির্গত হবে না। কারণ এই এলিসিনই হচ্ছে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। রসুনের এই অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষমতা কাজে লাগানোর জন্য কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়াই উত্তম

 

যাদের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, অতিরিক্ত রসুন খাওয়া তাদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অসুবিধা হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত রসুন শরীরে অ্যালার্জি ঘটাতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই উত্তম। রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ করলে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখুন। শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভালো। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে তা মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর পাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর যন্ত্রণার কারণ ঘটাতে পারে।