Monday, March 11, 2013

কলা



এটি মসা (Mussa) গণের অন্তর্গত কতকগুলি প্রজাতি ও তার ফল। ঔষধি উদ্ভিদের মধ্যে এটি বৃহত্তম। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে, এই উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে জন্মে। কলা একবীজপত্রী উদ্ভিদ। এর একটি অলীক-কাণ্ড (false trunk) বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘাকার ধারণ করে। এর ভিতরের নরম কাণ্ডটি, শ চওড়া চওড়া আঁইশযুক্ত রসালো পাতের ড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে। এই সল কাণ্ডটি প্রথমেই থাকে। গাছটি যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন এর অলীক-কাণ্ডের কেন্দ্রস্থল ভদ করে উদ্ভিদের মাথা দিয়ে বর হয়। এর শীর্ষদেশে মচারূপে স্ত্রী-পুরুষ ফুল দখায় যায়। এই মূল কাণ্ডকে বাঙলায় ভাদালি বা ভাড়ালি বলে।


পাকা কলার অনেক গুণ। পাকা কলা খেতে শুধু যে সুস্বাদু তাই নয়,পাকা কলার ভেষজ গুণও অসামান্য। শরীর ও মনকে নিমেষেই ঝরঝরে করে দেয়, অসুস্থতাও কমায় । বিজ্ঞানীরাও জোরেশোরে সেই কথাই বলছেন। তারা বলছেন, পাকা কলা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে কমায়। তাই সকালের নাস্তায় এবং দুপুর ও নৈশ ভোজে অন্তত একটি করে কলা খান। ফলে শরীর প্রচুর পটাশিয়াম পাবে, মস্তিস্ক রক্ত চলাচলে জমাট বদ্ধতার ঝুঁকি ২১ শতাংশ কমে যাবে।


ব্রিটিশ ও ইটালিয়ান গবেষকদের এই সমীক্ষায় এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ অন্যান্য খাদ্য যেমন সবজি, বাদাম, দুধ, মাছ, ডাল খেয়েও স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তবে পূর্বেকার সমীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও স্ট্রোক রুখতে কলার কথা গুরুত্বের সাথে বলা হলেও কলা নিয়ে এতদিন তেমন গবেষণা চলেনি। সর্বশেষ গবেষণাটি আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওগ্রাফির সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানীরা ৬০ এর দশক থেকে এ যাবপ্রাপ্ত সকল সমীক্ষা খতিয়ে দেখে সর্বশেষ এ ফলাফল প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দৈনিক ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি এক পঞ্চমাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। ইতিপূর্বে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দৈনিক পটাশিয়াম গ্রহণের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার মিলিগ্রাম নির্ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কলায় গড়ে প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম রয়েছে। যা শরীরে রক্তচাপ কমিয়ে আনে ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। উল্লেখ্য, শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে অনিয়মিত হার্টবিট, খিচুনি, অনিদ্রা ও ডায়রিয়ার মতো অসুখ দেখা দেয়।


এতে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণের সমন্বয় রয়েছে। কলায় শর্করা, সামান্য আমিষ, কিঞ্চিত ফ্যাট, পর্যাপ্ত খনিজ লবণ ও যথেষ্ট আঁশ আছে। খনিজ লবনের মধ্য আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ। কলায় ভিটামিন এ, বি ও কিছু ভিটামিন-সি আছে। একটি কলা প্রায় ১০০ক্যালরি শক্তির জোগান দেয়। কলায় আছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তি দুর করতে সহায়ক। কলা হজমে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটি বা গ্রাস্টিক আলসারের রোগীরা কলা খেতে পারেন উপকারী ভেবে। পাকা নরম কলা অ্যাসিডিটি নিরাময়ে সক্ষম। পাকস্থলীর আবরনীতে নরম কলার প্রলেপ আলসারের অস্বস্তি ওকমায়। অ্যাসিডিটির জন্য বুক জ্বালা কমাতেও কলা সহায়ক। কলা যেমন কোষ্টকাঠিন্য দুর করে,তেমনি পাতলা পায়খানাও উপকারী। বাতের ব্যথার জন্য কলা উপকারী। কলা লৌহ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরীতে কাজে লাগে। কলা তাই রক্তশূন্যতায় ও উপকারী। সবশেষে কলা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে ও কার্যকরী


আমাদের সবার প্রিয় এবং বিভিন্ন গুণাগুনে সমৃদ্ধ আরো একটি ফল কলা। কলা অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল।কলা শক্তি মান টিস্যু গঠনকারী উপদান,আমিষ,ভিটামিন এবং মিনারেল এর এক অতি উকৃষ্ট সমন্বয়।কলা ক্যালরীর একটি ভাল উৎস যাতে কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন ফ্রেশ ফলের তুলনায় বেশি। একটি বড় কলায় ১০০ এর বেশি ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কলাতে সহজে হজমযোগ্য চিনি আছে। যা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে এবং ক্লান্তি দূর করতে কলার ভাল ভূমিকা রয়েছে।


কলা দুধের সাথে মিশে খাওয়া গেলে তা হতে প্রায় পুরোপুরি ব্যালান্স ডায়াট পাওয়া যায়।
কলা নিরাপদ হজমের জন্য পথ্য হিসাবে কাজ করে। কলা নরম হবার কারনে হজম শক্তির কাজে বাড়তি ঝামেলা দেখা দেয় না। দীর্ঘকাল স্থায়ী আলসার রোগের ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা ছাড়াই কলা খাওয়া যায়। এটা অতিরিক্ত এ্যাসিডিটিকে প্রতিরোধ করে,এছাড়া এটি পাকস্থলীর আস্তরনের উপর একটি আবরন সৃষ্টি করে আলসারের উত্তেজনাকে প্রশমন করে। এছাড়া কলা  ডায়রিয়ায় মত রোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা যহেতু পেকটিন সমৃদ্ধ যা পানিতে দ্রবনীয় তাই এই দুই ক্ষেত্রেই কলার ভূমিকা সমান দরকারী।তাছাড়া কলা পেটের ক্ষতিকারক জীবানুকে উপকারী ব্যাকটেরিয়াতে পরিণত করতে পারে। কলা গেটে বাত ও বাতের চিকিসায় উপকারী। কলাতে উচ্চ পরিমান আয়রন থাকাতে তা এ্যানিমিয়ার চিকিসার জন্য উপকারী।কারন তা রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কলা ও দুধের মিশ্রন ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়েট চিকিসার ক্ষেত্রে ১০-১৫ দিন প্রতিদিন ৬টি কলা এবং চার গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে।এভাবে ৬টির পরিবর্তে ৪টি খেয়ে ধীরে ধীরে সবুজ সবজির দিকে ঝুকে পড়তে দেখা যায়। এভাবে ডায়েট চিকিসা ততক্ষন চালিয়ে যেতে পারেন যতক্ষন পর্যন্ত কাঙ্খিত ফলাফল না পাওয়া যায়। যেহেতু অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিদের শরীরে কোন সোডিয়াম থাকে না সেজন্য কলা তাদের জন্য উপকারী ফল।


প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় (খাওয়ার যোগ্য,নরম অংশ) আছে


ময়েশ্চার ৭০.১%, প্রোটিন ১.২%, ফ্যাট/চর্বি ০.৩%, মিনারেল ০.৮%,  আঁশ ০.৪%, শর্করা ৭.২%


মিনারেলস এবং ভিটামিন


ক্যালসিয়াম ৮৫মি.গ্রা., ফসফরাস ৫০মি.গ্রা., আয়রন ০.৬মি.গ্রা., ভিটামিন সি,অল্প ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৮মি.গ্রা.


পোকামাকড় কামড় দিলে কোন ঔষধ দেবার আগেই যদি কলা সেই জায়গাতে কলা দেয়া যায় তাহলে লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার ভাবটা কমে যায়। গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক যে চাপের জন্য উচ্চতাপমাত্রা হয়ে থাকে সেটা কলা খেলে ঠান্ডা এবং নিয়ন্ত্রণে আসে। যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যগ করার জন্য কলা অন্যতম উপকারী ফল