Thursday, March 7, 2013

জলপাই – Olive




জলপাইয়ের পাতা ও ফল দুটোই ভীষণ উপকারী। জলপাইয়ের রস থেকে যে তেল তৈরি হয় তার রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। প্রচন্ড টক এই ফলে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। এই ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে হৃৎপিন্ডের রক্তপ্রবাহ ভাল রাখে। ফলে হৃৎপিন্ড থেকে অধিক পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সিদ্ধ জলপাইয়ের চেয়ে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিমূল্য অধিক। এই ফলের আয়রণ রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।

জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান। এই আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এই পাতা ছেঁচে কাটা, ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে ঘা দ্রুত শুকায়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, ক্রমাগত মুটিয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া উপকারী পথ্য হিসাবে কাজ করে। মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করতেও এ পাতার গুঁড়া ব্যবহৃত হয়। রিউমাটিয়েড আর্থ্রাইটিসে জলপাই পাতার গুঁড়া ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা কমে।

জলপাইয়ের তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়াতে ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ভাল হয়, চুলের ঝরে যাওয়া তুলনামুলকভাবে হ্রাস পায়। সর্দি-কাশি হলে শরীর একেবারে রোগা-পাতলা হয়ে যায়। তরিতরকারি রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়। কারণ এ তেলের ফ্যাটি খুব সহজে হজম হয়। এটি কডলিভার অয়েলের চেয়েও ভাল কাজ করে। তাছাড়া কডলিভার অয়েলের বদলে জলপাইয়ের তেলও কাঁচা খেতে পারলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা খেতে অসুবিধা হলে কমলালেবুর রস বা অন্য যেকোন ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।


ভেষজ গুণে ভরা এই ফলটির তেল লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও পরিচিত। গ্রিক সভ্যতার প্রারম্ভিককাল থেকে এই তেল ব্যবহার হয়ে আসছে রান্নার কাজে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণ এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, জলপাই তেলে এমন উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখে। জলপাই তেল পেটের জন্য খুব ভাল। এটা শরীরে এসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তারা দিনে এক চা চামচ জলপাই তেল খেলে উপকার পাবেন। গবেষকরা বলেন, জলপাই তেল গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কুচকানো প্রতিরোধ হয়। গবেষকরা বিভিন্ন লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, প্রতিদিন দুই চা চামচ জলপাই তেল ১ সপ্তাহ ধরে খেলে তা দেহের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেষ্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়। অন্যদিকে স্প্যানিশ গবেষকরা জানিয়েছেন, খাবারে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। এটা পেইন কিলার হিসাবেও কাজ করে। গবেষকরা আরো জানান, গোসলের পানিতে চার ভাগের এক ভাগ চা চামচ জলপাই তেল ঢেলে গোসল করলে স্বস্তি পাওয়া যায়।