আদা
আদাজল খেয়ে লাগা বলে একটা প্রবাদ আছে বাংলা ভাষায়। আদার সমৃদ্ধ খাদ্যমানের কারণেই
বিজ্ঞজনেরা এই প্রবাদ প্রচলন করেছিলেন, সন্দেহ নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যতালিকায় আদা
একটি অত্যাবশ্যকীয় নাম।
আমরা জানি আদার অনেক ধরণের ভেষজগুণ আছে। বাঙালির ঘরে দৈনন্দিন আদার
ব্যবহারও কম নয়। তরকারির স্বাদ বর্ধনে, বিভিন্ন সালাদ তৈরিতে, ভর্তা
কিংবা যেকোনো মাখনা, আবার চায়ের সঙ্গে আমরা আদা দিতে
পছন্দ করি। বাঙালির ঘরে আদার ব্যবহার আরো একধাপ বাড়িয়ে দিতে গবেষকরা যেন আরো
গবেষণা করছেন এবং আদার গুণাগুণ বের করে চলেছেন। সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণা
অনুযায়ী, দিনে একটি করে আদা পায়ুপথ বা অন্ত্রে
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ১৫ জনের একটি দলকে প্রতিদিন
আদা খেতে দেওয়া হয়। এভাবে ২৮ দিন দু’গ্রাম করে আদা খেতে
দেন গবেষকরা। অন্যদিকে অপর ১৫ জনের দলটিকে একই সময়ে প্ল্যাসিবো ট্যাবলেট দেন।
ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ জন প্ল্যাসিবো গ্রহণকারীর তুলনায়
যারা প্রতিদিন আদা খেয়েছে সেই দলটির মাঝে পায়ুপথের প্রদাহ কম পরিলতি হয়েছে।
ভেষজ চিকিৎসক সুজানা রিক বলেন, তুলনামূলক কম ক্ষতিকর যেসব ক্যান্সার হয়ে থাকে তা
প্রতিরোধে আদা খুবই কার্যকরী। আর গবেষণায় সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি আদা মানুষের
জীবনমান বৃদ্ধি করে। এছাড়া কম খরচে অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রতিদিন একটি
করে আদা খাওয়াই যথেষ্ট। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ’ এর একটি জার্নালে গবেষণাটির ফলাফল
প্রকাশ করা হয়।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ক্যান্সার সেন্টারে পরিচালিত একটি গবেষণায়
দেখা গেছে যে, আদাগুড়ো ওভারিয়ান ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে।
যেসব নারী প্রথম গর্ভধারণ করে কিংবা ১৯ থেকে ২৭ বছর পর্যন্ত
গর্ভধারণের সময় প্রথমদিকে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এেেত্র বলা যায় আদার
বিকল্প নেই। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
ও অরুচি কমাতে আদা বেশ উপকারী। ধাত্রীবিদ্যা এবং গাইনোকলজি’ বিভাগের একটি জার্নালে গবেষণালব্ধ এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
আমাদের দেশে রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে জিনজার (আদা) গুড়োর বক্স পাওয়া যায়। সাধারণত এসব বক্স ভর্তি আদা রাস্তায় বিক্রি
হয়ে থাকে। আসলে চলাচল করার সময় বমি ভাব থাকলে জিনজারের বক্স কিনে মুখে দিতে দেখা
যায় অনেককে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লেনে, বাসে, ট্রেনে বা বিভিন্ন যানবাহনে চলার সময়
মোশন সিকনেসের কারণে বমি বমি ভাব হয়। এই বমি বমি ভাব কমাতে আদা বেশ কার্যকর।
হজমে সাহায্যের জন্য এবং বুকজ্বলা কমাতে যুগ যুগ ধরে চীনারা আদার
ব্যবহার করে আসছে। এটি তাদের একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। চীনের এই প্রাচীন
চিকিৎসা পদ্ধতি এখন অনেক দেশেই প্রচলিত। বুক জ্বালাপোড়া কমাতে তাই আদা খাওয়া হয়।
আদা ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা
বা ঠাণ্ডা, জ্বর এবং ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা রোধে সহায়ক হিসেবে
কাজ করে। এক কাপ ফোঁটানো পানিতে এক ফালি তাজা আদা ও লেবু মিশ্রন খেলে ঠাণ্ডাজনিত
হাঁচি, কাশি এবং জ্বর কমে যায়।
নারীদের মাসিক অসুস্থতা রোধে : ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা
গেছে যে, নারীদের মাসিক শুরুর প্রথম তিনদিন, চারবার আড়াইশ’ মিলিগ্রাম করে আদা খেলে পেটের
ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যা ওষুধ খেয়ে সম্ভব হলেও তার অনেক
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যায়।
ক্লান্ত মাংসপেশি ও শীতে কুঁচকে যাওয়া ত্বকের চিকিৎসায়, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করার জন্য আদা’র রস অতুলনীয়। গরম পানি তে চার
টেবিল চামচ আদাকুচি ফেলে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। সেই পানিতে গোসল করুন।
মাংসপেশীতে খিঁচ ধরে থাকলে বা মহিলাদের পিরিয়ডের সময় পেটে অসহ্যরকম ব্যথা
হলে দুই টেবিলচামচ আদা পানিতে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে মধু এবং লেবুর হাল্কা রস মিশিয়ে
খান।
উজ্জ্বল ত্বক এর জন্য ১১৫ গ্রাম ইপসম লবণ+১ টেবিল চামচ কাগজী লেবুর রস+১
টেবিল চামচ আদাকুচি নিয়ে ১৫ সেকেণ্ড ব্যবধানে মাইক্রোওয়েভে গরম করুন। উষ্ণ
মিশ্রণটি মুখে, হাতে, গলায় লাগান। ১০ মিনিট পরে ধুয়ে
ফেলুন।
লম্বা ভ্রমণের সময় জিনজার হাতে ফেরিওলা কে না দেখেছে? শুকনো আদাকুচি বমি’র ঔষধের থেকে
বহুগুণে ভাল। তবে ভাল হয়, যদি নিজের বাসায় তৈরি আদাকুচি
সাথে রাখতে পারেন। কারণ ফেরিওলার ‘জিনজার’ কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত কে জানে!
তাই আজ থেকে ঘরে আদা রেখে নিজেই হয়ে যান নিজের সেবক বা ডাক্তার।