Tuesday, March 5, 2013

গাজর




শীতকালীন সুস্বাদু, পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উচ্চ ফলনশীল সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিন যা ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে ভিটামিন ' তে রূপান্তরিত হয়। গাজরে প্রাপ্ত ক্যারোটিন কচুশাক, কলমিশাক, লালশাক ও পুঁইশাক বাদে অন্যসকল শাকসবজি ও ফলের চেয়ে বেশি। নিয়মিত গাজর খেলে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ'র অভাব পূরণ হয় যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকে এবং অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

পুষ্টিকর এবং অনন্য স্বাদের জন্য এ সবজিটি কাঁচা, সিদ্ধ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে খাওয়া হয়ে থাকে। গাজরের চাটনি বা আচার, কাসুন্দি, পুডিং, হালুয়া অতি সুস্বাদু ও মুখরোচক। ছোট বাচ্চাদের জন্য গাজরের হালুয়া অনেক উপকারী। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গাজর দিয়ে জ্যাম, জেলি এবং জুস তৈরি করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার রঙ্গিন করতেও গাজর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গাজর বীজ থেকে সুগন্ধি তেল প্রস্তুত করা যায় যা খাদ্য ও পানীয় শিল্পে ব্যবহার হয়।

গাজরে উচ্চ ক্যারোটিন থাকায় এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্যান্সার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ৫ দিন দৈনিক ১টি করে মধ্যম আকারের গাজর খেলে মহিলাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা হ্রাস করে এবং পুরুষের ১০% কোলেস্টেরল হ্রাস করে। গাজরে লুটিন  নামক এক ধরনের পদার্থ রয়েছে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের রোগ প্রতিরোধ করে। সুতরাং বয়স্কদের জন্য গাজর খাওয়া অতি জরুরি। লিউসিন যা আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড যা গাজরে বিদ্যমান রয়েছে। নিয়মিত গাজর খেলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হয় এবং পেটের নানারকম সমস্যা দূর হয়, হৃদপিন্ড ও মস্তিষ্ককে মজবুত রাখে, কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে।

স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের গুরুত্ব অনেক। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখের পুষ্টি জোগায় গাজর, চোখের স্নায়ুকে করে শক্তিশালী। গাজরের রস দেহে চর্বির মাত্রা কমায়। এটি রক্তের প্রধান উপাদান আরবিসিকে দীর্ঘজীবী করে। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার শরীরে যেসব কোলেস্টেরল রক্তের মধ্যে মিশে রক্তে জমাট বেঁধে যায়, হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সারা শরীরে পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে, গাজর সেসব কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের পর রক্তের ঘাটতি হলে তা পূরণে সহায়তা করে গাজর। আবার এটি মানুষের মেধাশক্তি বাড়ানোর কাজেও ব্যবহৃত হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে করে দ্বিগুণ কর্মক্ষম। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশজাতীয় উপাদান। এই উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই গাজর হোক সবার নিত্যদিনের খাবার।।

গাজরের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল- ক্যারোটিন ১০,৫২০ মাইক্রোগ্রাম, শর্করা ১২.৭ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭.০ মি. গ্রা., আয়রণ ২.২ মি. গ্রা., ভিটামিন বি১ ০০.০৪ মি. গ্রা., ভিটামিন বি২ ০.০৫ মি. গ্রা., চর্বি ০.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মি. গ্রা., অাঁশ ১.২ গ্রাম, অন্যান্য খনিজ ০.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৭ ক্যালরি। এ সমস্ত পুষ্টি উপাদান রোগমুক্ত এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত দরকারী।