Thursday, February 28, 2013

টমেটো - Tomato


দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি টমেটো। কাঁচা অথবা পাকা যেভাবেই খাই এটি আমাদের শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। সবজি হিসেবে টমেটোর জুড়ি অনেক।টমেটো আমাদের দেশে সারা বছর পাওয়া যায়।টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, কে, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, লাইকোপিন, ক্রোমিয়াম ও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনসমূহ। এটি যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে রান্না করে বা রান্না সুস্বাদু করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সালাদে বা মুড়ি মাখানোর সময় টমেটো অতুলনীয়। টমেটো সসের তো কথাই নেই। শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে টমেটোর ভূমিকার কথা নতুন নয়। সর্বাধিক উপকার পেতে টমেটো কাঁচা খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন, যাঁরা টমেটো খেতে ভালোবাসেন তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কম থাকে। খবর রয়টার্সের।

নিউরোলজিসাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা এক হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান লাইকোপেন কম ছিল। গবেষকরা দেখেছেন যাঁরা নিয়মিত টমেটো খেয়েছেন তাঁদের স্ট্রোকের আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কমে গেছে।

টমেটো, তরমুজ পেঁপেতে লাইকোপেন নামের এই রাসায়নিক উপাদানটি পাওয়া যায়। তবে টমেটোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে লাইকোপেন নামের এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টটি, যা শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, টমেটোয় থাকা লাইকোপেন অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের তুলনায় প্রদাহ ও রক্ত জমে যাওয়ার মত বিষয়গুলোকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক স্ট্রোক সেন্টারের পরিচালক ল্যারি গোল্ডস্টেইন জানিয়েছেন, এ ধরনের গবেষণা উত্সাহব্যঞ্জক হলেও এর বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ গবেষণায় মানুষের পুরো খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বলা হয়নি। তবে এ গবেষণা সবজি ও ফল সহযোগে সুষম খাবারের গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।
রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন ধরনের সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ল্যারি গোল্ডস্টেইন। তাঁর মতে, ফিনল্যান্ডের গবেষকদের গবেষণায় কম লবণ,বেশি পরিমাণে আঁঁশযুক্ত, কম চর্বি যুক্ত, ফল ও সবজি খাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ খাবারের অংশ হিসেবে যদি টমেটো বেছে নেওয়া হয় তবে সেটি যুক্তিসম্মত।

টমেটোর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গুণাগুণ:

প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে - প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩.৬ গ্রাম, ভিটামিন ৩২০ আই . ইউ, থায়ামিন ০.০৭ মিগ্রা, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিগ্রা, ফসফরাস ৩৬ মিগ্রা, আয়রন ১.৮ গ্রাম, পটাশিয়াম ১১৪ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৩১ মিগ্রা।

স্বাস্থ্য গুণ :

সম্প্রতি জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জন্ডিসে, চোখের রোগ নিরাময়ে, ডায়রিয়া, পাক¯’লির রোগে, হাঁপানীতে, লিভারের দুর্বলতায় টমেটোর গুণাগুণ অতুলনীয়। প্রতিষ্ঠাণটির আরও এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সবজির চেয়ে টমেটোতে ক্যান্সার নিরোধক উপাদান অনেক বেশি। গবেষকদের মতে, প্রোস্টেট গ্গ্নান্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, মুখ, স্তন, অগ্ন্যাশয়, অণ্ডনালি ও ঘাড়ের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে টমেটোর জুড়ি নেই। হার্টের জন্যও ভালো টমেটো। কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এটি। তাই নিয়মিত টমেটো খেলে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে আসবে।

ডায়াবেটিসের জন্য টমেটো বেশ উপকারী। এ সবজি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ যা দৃষ্টিশক্তিকে আরও উন্নত করে।

অর্জুন গাছের রসের সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে জেলি করে প্রতিদিন খেলে হার্ট ও বুকের ব্যথা কমে যায়।
মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে টমেটো।

ধূমপান ছাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ধূমপানের কারণে শরীরে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও কার্যকরী এ সবজি।

টমেটো শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে করে।
চুল ও দাঁতের জন্য উপকারী এ সবজি।

কিডনিকে সুস্থ-সবল রাখতে ভূমিকা পালন করে টমেটো।

ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী টমেটো। সৌন্দর্য সচেতন নারীরা অনেক সময় টমেটোকে ব্যবহার করেন দামী প্রসাধনীর বিকল্প হিসেবে।

মাথার খুশকি দূর করতে টমেটোর রসের সঙ্গে ১.৪ ভাগ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
যাদের ওজন কম, তারা প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে টমেটো খেলে ওজন বাড়বে।

বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে পাকস্থলী, কোলোরেক্টাল ও প্রোস্টেট ক্যান্সার অন্যতম।

পাকা টমেটো খাবারের আগে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

রূপচর্চায় টমেটো :

যাদের চেহারা একটু ফ্যাকাসে ও রক্তসল্পতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত একটি করে পাকা টমেটো খেলে উপকার পাবেন।

মাথার খুশকিতে আধাকাপ নারিকেল তেল এর সাথে ১/৪ কাপ টমেটোর রস মিশিয়ে মালিশ করলে  উপকার পাওয়া যাবে।

মুখে রোদের কালো দাগ তুলতে টমেটো স্ক্র্যাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

হাতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ১টেবিল চামচ ময়দা এবং ১টা পাকা টমেটোর মিশ্রণ খুবই উপকারী।

টমেটো যদিও শীতের সবজি তবে বর্তমানে সারা বছরই টমেটো পাওয়া যায়। তাই আমরা চাইলে প্রতিদিনের খাবারে এই পুষ্টিকর টমেটো রাখতে পারি।